স্ক্রিন টাইমের ফাঁদে তরুণ সমাজ: রিয়াজুল হক
- আপলোড সময় : ১৭-০৮-২০২৫ ০৯:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৭-০৮-২০২৫ ০৯:৩৩:৫১ পূর্বাহ্ন

আজকের তরুণ প্রজন্মকে বলা হয় ডিজিটাল নেটিভস। বোঝার জ্ঞান থেকেই তারা মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে পরিচিত। ফলে তাদের জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে স্ক্রিন। পড়াশোনা, বিনোদন, বন্ধুত্ব, এমনকি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক চর্চাতেও স্ক্রিন নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই নির্ভরতা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সেটি সামাজিক ও মানসিক সংকট তৈরি করে। বাংলাদেশেও আমরা এখন সেই বাস্তবতার মুখোমুখি।
স্ক্রিন নির্ভরতা কেবল নেতিবাচক দিক দিয়ে দেখা উচিত নয়। প্রযুক্তির কারণে তরুণরা এখন বৈশ্বিক জ্ঞানে সহজে প্রবেশ করতে পারছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার, অনলাইন কোর্স, ই-বুক ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা সহজ হয়েছে। আবার উদ্যোক্তা হওয়া, ফ্রিল্যান্সিং কিংবা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুযোগও তরুণদের নতুন করে কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলেছে। করোনা মহামারির সময়ে দেখা গেছে, স্ক্রিননির্ভর শিক্ষা না থাকলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা অচল হয়ে যেত।
তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা হলো, অধিকাংশই বিশেষ করে তরুণরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় স্ক্রিনে সময় কাটাচ্ছে। দিনে গড়ে ৬-৮ ঘণ্টা কেবল মোবাইলেই কাটাচ্ছে অনেকেই। ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব কিংবা অনলাইন গেমসের নেশা তাদের পড়াশোনা, সামাজিক সম্পর্ক এমনকি ঘুমকেও ব্যাহত করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে ইন্টারনেট গেমিং ডিসঅর্ডারকে মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বাংলাদেশে নানা গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর বয়সীদের ৬০ শতাংশ প্রতিদিন ৪ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করে।প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে এত সময় ব্যয় করে যে, তাদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। অনেকের মধ্যে একাকীত্ব, বিষণœতা, উদ্বেগ ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
অতিরিক্ত স্ক্রিন নির্ভরতার কারণে পারিবারিক যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। আগে সন্ধ্যায় পরিবারের, প্রতিবেশীদের সবাই মিলে আড্ডা বা টেলিভিশন দেখা প্রায় অভ্যাস ছিল। এখন প্রত্যেকে নিজ নিজ স্ক্রিনে ডুবে থাকে। এছাড়া বাস্তব জীবনের বন্ধুদের চেয়ে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। অথচ এসব অনলাইন সম্পর্ক সবসময় টেকসই হয় না, বরং ভুয়া পরিচয় ও প্রতারণার ঝুঁকি বাড়ায়।
মনে রাখা দরকার, স্ক্রিন নির্ভরতা কেবল মানসিক নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চোখের সমস্যা হচ্ছে। শারীরিক নাড়াচাড়ার অভাবে স্থূলতা বাড়ছে। অনিদ্রা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। অল্প বয়সেই মেরুদ- ও ঘাড়ের ব্যথা দেখা দিচ্ছে।
ডিজিটাল যুগে স্ক্রিন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। বরং আমাদের শেখতে হবে কীভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। তরুণরা যদি সময়কে শিক্ষা, কাজ, বিনোদন ও বাস্তব সম্পর্কের মধ্যে ভাগ করে নেয়, তাহলে স্ক্রিন তাদের শত্রু নয়, বরং বন্ধু হবে। আর সবচেয়ে মূল্যবান প্রশ্ন হলো, আমরা কী স্ক্রিনকে ব্যবহার করব, নাকি স্ক্রিন আমাদের ব্যবহার করবে? এই উত্তর খুঁজে পাওয়াই তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। [সংকলিত]
লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ